ভয়ানক ভুতের গল্প- ওটা কে? / বাংলা ভুতের গল্প /Bengali horror story/ota k/Bangla bhuter golpo/Bangla vuter golpo/Bengali horror story
গল্পের নাম - ওটা কে? (প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য)
দ্বিতীয় বা অন্তিম পর্ব
পরশুদিন বিকেলে মাঠ থেকে ফিরে দেখলাম গোয়ালের গরুগুলি ভীষণ চিৎকার করছে, আমি চুপিচুপি গিয়ে দেখি নিতু গরুর বাটে মুখ দিয়ে দুধ খাচ্ছে, দেখে তো আমি চমকে উঠি। আজ পর্যন্ত যে কখনো গোয়ালে ঢোকেনি তার একি কান্ড, আমি তখনও কাউকে কিছু বলিনি কিন্তু কালকে সন্ধ্যেবেলায় তুলসী মঞ্চে প্রদীপ জেলে যখন ঘরের দিকে আসছি,দেখি কে যেন ঐ আমগাছটা থেকে নেমে এসে আমাদের ঘরে ঢুকে গেল,আমি তাড়াতাড়ি গিয়ে দেখি নিতু একাই ঘরে আছে আর কেউ নেই। আজ সকালে উঠে যখন দেখি আমগাছটার একবারে মগডালে একটি আস্ত হনুমান মৃত অবস্থায় ঝুলছে। হনুমানটি সারা শরীর যেন কে খুবলে খেয়েছে, তখন আমার মনে পড়ে গেল কাল সন্ধ্যের ঘটনা আর বুঝতে বাকি রইল না এটা নিতুর কাজ,সঙ্গে সঙ্গে ওর বাপ আর ভাইকে ডেকে সব বললাম, ওরা আমায় কথা বিশ্বাস করে গাঁয়ের কিছু লোককে নিয়ে আপনাকে আনতে যায় কিন্তু খানিকক্ষণ পরে নিতু যেন কিভাবে সব জানতে পারে।সে হন্তদন্ত হয়ে চারিপাশ ঘুরতে থাকে। আমি ভয় পেয়ে আশপাশের কিছু লোককে ডেকে আনি,তারা ওকে ধরে রাখে কিন্তু একে ধরে রাখতে কেউই পারছিল না, এখন আপনি বাঁচান ওকে বলে হাউ হাউ করে আবারো কাঁদতে শুরু করলো নিতাইয়ের মা।
ওঝা সব শুনে বলল- এর মধ্যে যে বাস করছে সে কোন সাধারণ প্রেত নয়,এ এক অসীম শক্তিশালী এক পুরুষ, কালপুরুষ। তবুও আমি এর শেষ দেখে ছাড়ব। এই বলে ঝোলা থেকে শ্বেত চন্দনের গুঁড়ো, সরষে, শুকনো লঙ্কা একত্রে একটি পাত্রে রেখে সেই পাত্রটিতে কাঠ কয়লা দিয়া আগুন ধরিয়ে,খানিক পর আগুন নেভাতে যে ধোঁয়া সৃষ্টি হল সেই ধোঁয়া ফু দিয়ে নিতাইয়ের গায়ে ছড়াতে লাগলেন,দেখলাম সঙ্গে সঙ্গে নিতাই গর্জন করে উঠল,দুচোখ রক্তবর্ণ,
সে বলল- তুই কি ভেবেছিস আমাকে এইভাবে তাড়াবি? তবে শুনে রাখ এ দেহ আমি ছাড়বো না, সে তুই যাই করিস না কোনো।
দেখলাম শঙ্কর ওঝা ও ছেড়ে দেওয়ার পাত্র নয়, সে তৎক্ষণাৎ উঠোনের এক কোণে দাঁড় করানো ঝাঁটা নিয়ে গায়ত্রী মন্ত্র জপ করতে করতে মাঝে মাঝে সেই ধোঁয়া নিতাইয়ের দিকে ফু দিয়ে ঝাঁটা দিয়ে মারতে লাগল তার গায়ে, যন্ত্রণায় ভয়ঙ্কর আর্তনাদ করে উঠলো নিতাই, তারপর সে গভীর গর্জন করে শুন্যে উঠে শংকর ওঝাকে ঠেলে ফেলে দিলেন। শঙ্কর ওঝা মাটিতে পরতেই তার হাত দিয়ে ঝাঁটা ও পাএ দুটোই ছিটকে গেল।
এই দৃশ্য দেখার পর দেখলাম, গ্রামবাসীদের মধ্যে কিছু জন কেমন হয় টকটক করে কাঁপছে, আমার শরীরেও যেন ঠান্ডা স্রোত বয়ে গেল।
শংকর ওঝা উঠে দাঁড়ালেন,এবার ঝোলা থেকে একটি সিঁদুর লাগানো কঙ্কালের হাড় বার করে সেটিকে চেপে ধরলেন নিতাইয়ের কপালে, আকাশ বাতাস কাঁপানো চিৎকার করতে লাগলো নিতাই।
ওঝা বললেন- কে তুই?তোর নাম ই বা কি? একে ধরেছিস কেনো? বল?
নিতাই বলল- বলছি,বলছি তার আগে এটা আমার কাছ থেকে সরা, আমার নাম শেতল, শেতল মান্না, মান্না পাড়ায় আমাদের বাড়ি। জলে ডুবে মারা যাই কয়েক মাস আগে,তাই আমি আস্তানা গারি জমিদারবাড়ি ডানপাশে বট গাছটা তে। আমি তো কাউকে কোন ক্ষতি করিনি, এ গ্ৰামের ছেলে-ছোকরারা সন্ধ্যের পর ওই জমিদার বাড়ির ছাদে বসে মদ খায়, আমি সব দেখি, ওরা যখন মদ খায় তখন আমি গাছ থেকে নেমে এসে ওদের পাশে বসে থাকি,কেউ আমাকে দেখতে পায় না, আমিও ওদের ভয় দেখাই না,কোনো ক্ষতিও করি না, সারাদিন একা একা ঘুরি তাই ওরা আসলে আমারও ভালোলাগে। ছেলেগুলো যখন চলে যায় তখন আমি আবার ছাদ থেকে গাছ বেয়ে মগডালে গিয়ে বসি,আর রাত হলে গাছ থেকে লাফিয়ে পাশের পুকুর টাতে ঝাপ দিই। কিন্তু সেদিন আমি যখন একটু বেড়িয়েছি এসে দেখি,এই শয়তান টা আমার ওই বট গাছ টাকে কাটছে,দুটো বাদে সব ডাল কেটে ফেলেছে দেখে আমার গা জ্বলে উঠলো, ইচ্ছা করছিল এখন ই ওর মাথাটা ধরে ঘুড়িয়ে দিই। কিন্তু দেখলাম আশেপাশে আর ও অনেক লোক গাছ কাটছে, আমি সুযোগ খুঁজছিলাম প্রতিশোধ নেবার,একটু পরে দেখি আশেপাশের ছেলেগুলো সব আস্তে আস্তে ঘরে ফিরছে কিন্তু এই শয়তানটা গাছে উঠে একটা ডাল তখনও কেটে চলেছে, আমি দেখলাম এই সুযোগ প্রতিশোধ নেবার। একটা লাথি মেরে ফেলে দিলুম নিচে তে, কিন্তু তেমন কিছুই হলো না, তখনই ওই অর্ধেক কাটা ডাল টা ভেঙ্গে ফেলি ওর বুকে,ব্যাস সব শেষ, তারপর আস্তে আস্তে ওর শরীরে ঢুকে পড়লুম। হাহাহাহা
এই কথাগুলো শোনার পর দেখলাম নিতাইয়ের মা পড়ে গেল উঠোনে, আমারও জ্ঞান হারাবার জোগাড়, কোনমতে নিজেকে সামলে নিয়ে দেখলাম সিঁদুর মাখানো হাতটা তুলে ওঝা বললেন- তাই আমি এখানে আসা থেকে মরা পচা গন্ধ পাচ্ছি,তোকে এই মৃত শরীর ছাড়তে হবে, বল ছাড়বি কিনা?
নিতাই বলল- না.. এ দেহ আমি ছাড়বো না, কিছুতেই না, আমার তাহলে অন্য দেহ চাই? আমি দেহের স্বাদ পেয়েছি আমি ছাড়বো না, কখনোই না!
তাহলে দেখ বলে হাড়টি আবারও নিতাইয়ের কপালে চেপে ধরল ওঝা। নিতাই চট পট করতে লাগলো যন্ত্রণায়।
সে বলল- আ.. আমি যাচ্ছি। আমাকে ছেড়ে দে, ছেড়ে দে আমাকে, আমি চলে যাচ্ছি এ শরীর ছেড়ে।
তুই যে চলে গেছিস সেটা কিভাবে বুঝবো? পাশের আম গাছটার দিকে দেখিয়ে ওঝা বলল, ওই গাছটার যেকোনো একটি ডাল তোকে ভেঙে দিয়ে যেতে হবে, বল রাজি?
নিতাই হাসিমুখে বলল- না, আমি কোনো ডাল ভাঙবো না,আমি অন্য কিছু ভেঙে দিয়ে যাব। তবে আমি কথা দিচ্ছি, আমি এই গ্রামে আর কোনদিনও ফিরবোনা।
ওঝা বলল- যা, তা তোর যা ইচ্ছা তাই ভেঙে যা;
হঠাৎ দেখি নিতাইয়ের সেকি অট্টহাসি, তারপর ঘটে গেল একসঙ্গে দু দুটো ঘটনা,নিজের চোখে না দেখলে হয়তো আমি কোনদিনও এটা বিশ্বাস করতাম না, দেখলাম নিতাইয়ের দেহটা ধপ করে মাটিতে পরে গেল, শরীর থেকে জায়গায় জায়গায় মাংস গলে পড়ছে দেখে মনে হলো অনেক দিনের বাসি মরা, নিমেষের মধ্যে বাতাসে ছড়িয়ে পড়লো এক পচা দুর্গন্ধ, গ্রামবাসীরা নাক ডাকতে শুরু করলো, তারপরে দেখি শংকর ওঝার মাথাটা কে যেন পেছন দিকে ঘুরিয়ে দিয়ে চলে গেল,শংকর ওঝা ওই অবস্থায় পড়ে গেল মাটিতে, চারিদিকে জেগে উঠল কান্নার রোল আমিতো হকচকিয়ে গেছি, তারপরেই আমার মনে পড়ে গেল নিতাইয়ের শেষ কথাগুলো, নিতাইএর মধ্যে থাকা প্রেত বলেছিল আমি ডাল ভেঙে যাবনা, ভাঙবো অন্য কিছু, তাই সে শংকর ওঝার ঘারটাই ভেঙে দিয়ে গেছে। আমি আর দেরি না করে সাইকেলটা নিয়ে তাড়াতাড়ি ফিরে এলাম, কারণ ওগ্রাম ছেড়েছে সে,তাই সে এই গ্রামেও তো আসতে পারে? তোরা তাড়াতাড়ি কাজ শেষ কর, বেশি রাত করে কোন লাভ হবে না, আমাদের বেরোতে হবে এই বলে থামল বিশু।
আমরা এতক্ষণ সবাই মন্ত্রমুগ্ধের মতো শুনছিলাম বিশুর কথা, চারিদিক নিস্তব্ধ শুধু ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক শোনা যাচ্ছে,কারো মুখ দিয়ে কোন কথা বের হচ্ছে না কারণ সবাই যেটা জানে বিশু কোনদিনও মিথ্যা বলে না,বা ভয় দেখানোর জন্য বানিয়ে গল্প ও শোনায় না।
আমি ব্যাপারটাকে হালকা করার জন্য বললাম- না না এই গ্রামে সে আসবে না, আরও তো অনেক গ্রাম রয়েছে সেখানেই যাবে হয়তো। এই বলে মদের গ্লাসটা হাতে নিয়ে যেই মুখে তুলতে যাব অমনি হঠাৎ মনে পড়ে গেল,একটা নয়,দু-দুটো কথা, আমার বুকের রক্ত যেন ধীরে ধীরে বরফ হয়েয় যেতে লাগলো।
প্রথমটা হল খবর ছাপাতে গিয়ে লক্ষ্য করেছিলাম, প্রায় ছয় মাস আগে চোরাচালানকারীদের একটি ট্রাক বিপুল আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে জলপাইগুড়ির কাছে পুলিশের তাড়া খেয়ে ব্রিজের গার্ডরেল ভেঙে নিচে পড়ে যায়,ট্রাকের ড্রাইভার,খালাসী কে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করে পুলিশ।
আর দ্বিতীয় টি হল আমার পাশে বসে থাকা আমার স্কুল জীবনের বন্ধু ভুতোর, স্কুলের নাম ছিল শেতল মান্না, তার বাড়িও তো ওই গ্ৰামের ই মান্না পাড়ায় ।
হঠাৎ অমল দেখলাম আর্তনাদ করে বলে উঠলো- ও..ও...ওটা কে ? ওটা কে ?
আমি গ্লাসটা কাঁপা কাঁপা হাতে রেখে চোখ তুলে তাকালাম ভুতোর দিকে, দেখলাম ভুতোর রূপ সম্পূর্ণ পাল্টে গেছে, আমার পাশে বসে আছে একটা ধূসর লোমে ঢাকা এক দানব, চোখ দুটো তার উল্টানো, মাথার ওপরের চুলগুলো সাপের মতো কিলবিল করছে।এই বলে মহেশ সান্যাল চুপ করে গেল।
এবার পড়ুন - হাঁড় কাঁপানো ভুতের গল্প-পাতাল পুরীর রক্তখাদক
নরেন বলল- তারপর কি হলো মহেশদা?
মহেশ সান্যাল আবারও বলল- তার পরদিন গ্রামের লোকজন খোঁজ করতে করতে জমিদার বাড়ীর ঠিক পাশে গিয়ে দেখে, চারটি মৃতদেহ কাদায় মুখ গুজে পড়ে আছে,ওরা সবাই ধরাধরি করে লাশগুলো কে তুলে চমকে গেল।
এক জন গ্রামবাসী বলল- আরে এরা তো আমাদের গ্রামেরই ছেলে চাঁদু,অমল,বিশু আর যদু।
হো হো করে হেসে উঠলোঠে ধীরেন,তারপর বলল- তা ওই ভুতটা বাদে তোমরা ছিলে পাঁচ জন,মারা গেলে চারজন। তার মানে বেঁচে রইলে তুমি,তা তোমাকে কি কারণে ছেড়ে দিলো এই ভূত?
মহেশ সান্যাল বলল- আমি তো বলিনি যে আমাদের মধ্যে চারজনকে মেরে ফেলেছে সে। আমাদের পাঁচজনকে ঘাড় মটকে উপর থেকে ফেলে দিয়েছিল।
সমর বললো- কি যা তা বলছ তোমাকেও মেরে দিয়েছে?
মহেশ- আমি ঠিকই বলছি, আমাকেও হত্যা করা হয়েছিল, শুধু আমার লাশ পাওয়া যায়নি, কারন সে আমার মধ্যেই বাসা বেঁধেছে.... হাহাহাহাহা
(সমাপ্ত)
লেখক-অভিজিৎ দেয়াশী
গল্পটি কেমন লাগলো অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন
পাতালপুরীর রক্তখাদক (ভুতের গল্প)
Post a Comment
0 Comments