গল্পের নাম - ওটা কে?      

New Bengali horror story, Bangla vuter golpo, Sunday suspence story', Sunday suspence new story

প্রায় প্রতিদিনই মহেশ বাবুর বাড়ির ছাদে আসর বসায় তারই পাড়ার বন্ধুরা। সন্ধ্যে ৬টার মধ্যে প্রায় সকলেই সেখানে এসে উপস্থিত হয়। গল্প গুজব,রসিকতায় জমে ওঠে সন্ধ্যের আড্ডা। মহেশ বাবুর বাড়ির ছাদটি একতলা, তবে ছাদটি বেশ বড়। মহেশ বাবুর বাড়িতে যে সকল ব্যক্তিগন আড্ডা দিতে আসেন, তাদের সকলের থেকে বয়সে অনেক টাই বড় মহেশ স্যান্নাল।তাইকে সকলেই একটু সমীহ করে চলে। মহেশ স্যান্নাল বিয়ে করেন নি, তিনি কোথায় কিসে চাকরি করেন তাও কেউ জানেনা, বলতে গেলে,সে বিষয় নিয়ে কেউ বেশি মাথা ঘামায় ও না। প্রতিদিনের মতো সেদিনও আড্ডা বেশ ভালোই জমে উঠেছিল, হঠাৎ মহেশ সান্যাল বললেন - আজ শশীধর এলোনা যে?

হারান বলল-আজ বিকেলে ফেরার পথে শশীকে তো দেখলাম ওই স্টেশনের ধারে। একটা দোকান থেকে বাজি, পটকা কিনছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম - কি হে ছেলে মেয়ে দের জন্য বাজি কিনছো বুঝি?
শশী বলল- হ্যাঁ, বায়না ধরেছে আজ ই কিনে দিতে হবে, তাই আর কি!
হারান - "তা আজ যাবেতো সান্ন্যালদার বাড়ি?
শশী বলল- হ্যাঁ ,তাতো যাবোই,আমি ঠিক সময়েই পৌঁছে যাব।"
তারপর আমি চলে আসি।
মহেশ বাবু হাতের ঘড়িটা দেখে বললেন- ৭টা বাজতে চললো,আর কখন আসবে?
এইসময় সমর উঠে, পকেট থেকে একটা বিড়ির প্যাকেট বার করতে করতে সিঁড়ির দিকে যেতে যেতে বলল- ছেলে মেয়ের সাথে হয়তো বাজি পোড়াচ্ছে দেখো গে, তাই হয়তো আসেনি, তাছাড়া এখন আর এসে কি করবে, আমাদের তো ওঠার সময় হয়ে গেল!
এই বলে সিঁড়ি দিয়ে নামতে গিয়ে থকমে দাঁড়ালো সমর। সোরেন মহেশ বাবুর সামনে ধুমপান করে না,তাই সে সিঁড়ির কাছে গিয়ে কর্ম সারে।
হঠাৎ ই ও মাগো,বাবাগো বলে চিৎকার করে ছুটে চলে এলো সোরেন। সবাই তো হতবাক, কি হল ,কি হয়েছে? জিজ্ঞাসা করল বন্ধু রা!
সমর বলল- ভু..ভু..ভুত, ও ওখানে ভুত, দেখলাম সাদা শাড়ী পড়ে হামাগুড়ি দিয়ে, সিঁড়ি দিয়ে উঠে আসছে আর মুখ টা কি বিভৎস!
সবাই হুরমুর করে উঠে গেল সেই সিঁড়ির দিকে।
নগেন বলল- কই হে, কোথায় তোমার ভুত?যতসব , কি দেখতে কি দেখেছে। চলো সবাই আবার গিয়ে বসি।
ভীড়ের মধ্যে থেকে ধীরেন বলল- ওসব ভুত টুত বলে কিছু হয় না, সবই ভাওতা। মানুষ কে ভয় দেখানোর একটা কৌশল মাত্র।
সমর বলল- আরে তোমরা বিশ্বাস করো,আমি ঠিক দেখেছি, একজন আসছিল ওই সিঁড়ি বেয়ে।
হারান বলল- তা তোমার ভুত কি হাওয়ায় উড়ে গেল।
মহেশ সান্যাল বললেন- তোরা এত কথা না বলে লাইট টা জ্বেলে নিচের ঘরটা একবার দেখে এলেই তো হয় ?
ওনার কথা শুনে সমর বাদে বাকিরা ধীরে ধীরে নেমে গেল সিঁড়ি দিয়ে। সমর বসে রইল মহেশ সান্যাল এর কাছে।

আরও পড়ুন- হাড় হিম করা গল্প- পাতালপুরীর রক্তখাদক


সমর বলল- বিশ্বাস করো মহেশ দা আমি ঠিক দেখেছি।
মহেশ বাবু মনে মনে মুচকি হাসলেন।
কিছুক্ষণ পর বাকিরা হই হাল্লা করতে করতে উঠে এসে বলল- বললাম না কিছু নেই, জেগে জেগে স্বপ্ন দেখলে যা হয় ।
মহেশ সান্যাল আবারও বললেন- চিলে ছাদের ওই অন্ধকার কোনটা একবার উঁকি মেরে দেখে আয় তো নরেন?
নরেন সেখানে গিয়েই ভয়ে আর্তনাদ করে উঠলো। বলল - ও..ও ..ওটা কে?
বাকিরা হুরমুরিয়ে সেখানে গিয়ে দেখে, সত্যিই ওখানে সাদা শাড়ি পরে কে যেন বসে আছে, আর মুখটা কি বিভৎস, সারা মুখে কাটা কাটা দাগ, আর সেখান থেকে বেরিয়ে আসছে কালচে তরল রক্ত। এ দৃশ্য দেখে যে কারো হার্ট ফেল হতে পারে। প্রায় সকলেই এ দৃশ্য দেখে ভয় পেয়েছে। তখনি দেখা গেল নরেন মণ্ডল হটাৎ ধপ করে পরে গেল মাটিতে।
এসময় মহেশ সান্যাল উঠে এসে বললেন- আরে তোমরা কেউ ভয় পেওনা, ওটা কোনো ভুত না, ওটা শশী, শশীধর দোলুই। আর নরেন কে তুলে ওর মুখে জলের ছিটে দাও,ও জ্ঞান হারিয়েছে।
অন্ধকার থেকে বেরিয়ে এসে সামনে দাঁড়িয়ে মুখ থেকে টেনে মুখোশ টা খুলে ফেললো শশীধর।
ধীরেন রাগান্বিত কন্ঠে বলল- এটা কিন্তু ঠিক নয় শশী, এভাবে ভয় দেখানোর কোনো মানেই হয় না। নরেনের কিছু যদি হয়ে যেতো? আর মহেশদা আপনি সব জেনে শুনে ..?
মহেশ বাবু বললেন- তোমরা খামোখাই ভয় পাচ্ছো,ও যে এতো ভীতু সেটা তো আমি আগে জানতাম না,নরেন তো সবসময়ই বলে আমি ভুতে ভয় পাই না,যে জিনিস নেই ,সে জিনিসে ভয় পাবোই বা কেন, তাই আজ ভুত চতুর্দশীর দিনে শশীকে ভুত সাজিয়ে ওকে একটু বিশ্বাস করালাম,হা হা হাহা, বলে হেসে উঠলেন মহেশ সান্যাল।
ধীরেন বলল- নরেন কি মনে করে আমি জানিনা,তবে আমি কিন্তু শশীকে দেখে একটুও ভয় পাইনি। আর ভুত যদি সত্যিই থাকতো তাহলে কি নরেনকে ভয় দেখানোর জন্য মিথ্যার আশ্রয় নিতে হত।  আজ তো ভুত চতুর্দশী, কই সত্যি কারের ভুত একটা এনে দেখাও তো দেখি? দেখি তোমার ভুত আছে কি নেই?
ধীরেনের কথা শুনে মনে মনে অপমানিত বোধ করলেন মহেশ সান্ন্যাল। এদিকে দু-চার বার মুখে জলের ছিটে দিতেই আস্তে আস্তে চোখ খুললো নরেন। তারপর উঠে বসে শশী কে শাড়ি পড়া অবস্থায় দেখে ধীরে ধীরে সব বুঝতে পারলো।সে কোনো শব্দ উচ্চারণ করলো না, শুধু সকলের মুখের দিকে চেয়ে তাদের মনের ভাবভঙ্গি জানার চেষ্টা করল। কিছুক্ষণ সবাই নিঃশ্চুপ থাকার পর মহেশ সান্যাল বললেন- তোমরা আমাকে কতটা বিশ্বাস করো আমি জানিনা,তোমরা শহরে জন্মেছো, এখানের আধুনিক ভাবধারার সাথে বড় হয়েছো। তাই তোমাদের বিশ্বাস নাও হতে পারে আমার কথা। তবে আজ পর্যন্ত আমি কখনও মিথ্যে বলিনি। ভুত আগেও ছিল আর এখনও আছে। আমি গ্ৰামের ছেলে, গ্ৰামেই মানুষ তবুও আমি ছোট বেলায় এই তোমাদের মতই ভুতে বিশ্বাস করতাম না। ভাবতাম ওসব বুজরুকি, বাচ্চাদের ভয় দেখানোর জন্য বড়দের একটি মিথ্যে কল্পনা মাত্র, কিন্তু না. পরে সে ভুল আমার ভাঙে। কারও কাছে শোনা নয়, আমার চোখে দেখা সে দৃশ্য,কি ভয়ঙ্কর আর শুধু আমি না আমার চার বাল্যবন্ধু ও তাকে দেখেছিল ।
‌এসময় সোরেন বলল- তা কি দেখেছিলে মহেশ দা? কি হয়েছিল সেদিন? আমরা শুনতে চাই সে ঘটনা?
‌এতক্ষনে নরেন পুরোপুরি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এসেছে, সেও বলল- মহেশ দা আমরা তোমাকে বিশ্বাস করি, তাই জানি তুমি তোমার জীবনের সত্যি ঘটনাই বলবে?
‌মহেশবাবু বললেন- শুধু বলবো না,দেখাবোও। তাহলে শোনো, আজ থেকে প্রায় ৪০বছর আগের ঘটনা। সেদিনটা ছিল আষাঢ় মাসের কোনো এক রবিবার।সকাল থেকে মুষলধারে বৃষ্টি হয়ে চলেছে। আমরা কয়েক জন বন্ধু মিলে দুপুরের পর আড্ডা দিচ্ছিলাম ক্লাবে।

                           (প্রথম পর্ব)

গল্পের দ্বিতীয় পর্ব- রক্ত জল করা ভুতের গল্প - ওটা কে? ( দ্বিতীয় পর্ব)