তখন রাত দুটো - Bangla bhuter golpo 2022 ( বাংলা ভূতের গল্প ) Bengali best horror story

 গল্পের নাম- তখন রাত ২টো

তখন রাত দুটো,Bangla bhuter golpo 2022, বাংলা ভূতের গল্প, Bengali best horror story,

রাত তখন প্রায়১টা বেজে ৪৫মি:। দুজন বন্ধু কারখানার জরুরী কাজ শেষ করে হেঁটে বাড়ি ফিরছিলেন। হঠাৎ লোডসেডিং হয়ে যাওয়ায় রাস্তার লাইট গুলি নিভে যায়। সেই জনমানবহীন অন্ধকার রাস্তায় তারা মাত্র দুজন। প্রথম বন্ধু তারাতারি পিঠের ব্যাগটা নামিয়ে,চেন খুলে কি যেন হাতরাতে লাগলো। দ্বিতীয় বন্ধু  বিরক্ত হয়ে বলল- "টর্চ টা কি  আজ আনতে ভুলে গিয়েছিস নাকি?"

প্রথম বন্ধু বলল- "না, না ব্যাগের মধ্যে ই আছে, এইতো পেয়েছি! এই বলে টর্চ টি বের করে,সেটি জ্বালালো।"
আবার দুই বন্ধু হাঁটতে শুরু করলো। এবার বড় রাস্তা ছেড়ে,ডান দিকের ছোট রাস্তায় ঢুকলো তারা। কিছুটা পথ অতিক্রম করতেই,তারা শুনলো কোথা থেকে যেন বাচ্চার কান্নার আওয়াজ ভেসে আসছে। তারা শুনে কিছুটা অবাক হল,কারন সেই রাস্তার দুইধারে ছোট বড় গাছের সারি আর তারপরেই সূদুর খেলার মাঠ।
প্রথম বন্ধু টর্চ এর আলোয় দুদিক টা ভালো করে দেখলো তারপর বলল- "এই মাঠে র মধ্যে কেউ বাচ্চা ফেলে যায়নি তো?"
দ্বিতীয় বন্ধু- "আমার কিন্তু খুব ভয় করছে,আমি শুনেছি রাতে নাকি এখানে অনেকে ভুত দেখেছে তাই বেশি রাত হয়ে গেলে সবাই এই রাস্তার বদলে ওই মন্ডল পাড়ার রাস্তা দিয়ে যায়।"
প্রথম বন্ধু বলল- "আরে দূর,ওসব মানুষকে ভয় দেখানোর একটা কৌশল,যাতে এখানে কেউ না আসেআসলে এখানে কি হয় জানিস স্মাগলিং"।
ডানদিকের বিশাল মাঠটির দিকে হাত দেখিয়ে আবারও বলল- "ওই মাঠের শেষ প্রান্তে একটা টালির পুরানো বাড়ি আছে, শুনেছি ওখানেই যত অবৈধ জিনিস রাখা থাকে।"
দ্বিতীয় বন্ধু-"ও সব ছাড়, তাড়াতাড়ি চল, আমাদের বাড়ি যেতে হবে।"
এই বলে কিছু টা রাস্তা এগোতেই আবারও তারা শুনতে পেল সেই বাচ্চার কান্নার আওয়াজ। শব্দ টা আসছে ডানদিকের একটি জামগাছের কাছ থেকে। থমকে দাঁড়ালো দুজন। এবার তারা লক্ষ্য করলো শব্দটা ধীরে ধীরে বাড়ছে। প্রথম বন্ধু টর্চ এর আলোটা জাম গাছের গোড়ায় ফেলতেই চমকে উঠলো,সে দেখলো প্রায় দু-ফুট হাইট এর একটা বাচ্চা ছেলে, আবার ঠিক ছেলেও নয়, মানে পুরো শরীর টা একটি বাচ্চা ছেলের মতো হলেও মুখটা একটি প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ এর। টর্চ এর আলোয় তারা দেখতে পেল, সে ইতিমধ্যে ই হামাগুড়ি দিয়ে কাঁদতে কাঁদতে রাস্তায় মাঝে এসে দাঁড়িয়েছে। এবার তারা দেখলো বাচ্চাটির কান্নার আওয়াজ ক্রমে ক্রমে পরিবর্তন হচ্ছে হাসির শব্দে, সাথে মুখোভঙ্গিও পাল্টাতে শুরু করেছে। বাচ্চাটির উপর যে টর্চের আলো পড়েছিল, সেই আলো এখন কাঁপতে শুরু করেছে।
প্রথম বন্ধু বুঝতে পারলো তার সারা শরীর থর থর করে কাঁপছে,ফলে হাতে ধরে রাখা টর্চ টির আলোটি  কাঁপছে। বাচ্চা টি এবার ধীর পায়ে এগিয়ে আসতে লাগলো দুই বন্ধু র দিকে। দেখে মনে হচ্ছে,যেন মাটিতে তার পা ই পড়ছে না,সে যেন হেঁটে আসছে বাতাসে ভর দিয়ে। মাঠের উপর দিয়ে বয়ে আসছে মৃদু শীতল বাতাস, ঠিক যেমন কোথাও মুষলধারে বৃষ্টি হয়ে যাওয়ার পর, সেখানকার জলীয় বাষ্প বাতাসে মিশে বাতাস কে শীতল করে সেই হাওয়া বইতে থাকে অন্যস্থানে।
এবার প্রায় কাছাকাছি চলে এসেছে সেই বাচ্চাটি, এতক্ষণ দ্বিতীয় বন্ধু টি হাত শক্ত করে ধরে রেখেছিল প্রথম বন্ধু র, কিন্তু আর সে পারলো না, সে এক বিকট আর্তনাদ করে ধপ করে পড়ল মাটিতে। এই দেখে প্রথম বন্ধু র অবস্থা আরও শোচনীয় হয়ে পড়ল,হাতে রাখা টর্চ টি ও এতক্ষনে তার হাত দিয়ে খসে পড়েছে। সে দিক বে দিক জ্ঞানশূন্য হয়ে ছুটতে লাগলো মাঠের মধ্যে দিকে, ছুটছে তো ছুটছে, কিন্তু মাঠ যেন শেষ হতে চাইছে না,পেছন থেকে শুনতে পেল সেই অট্টহাসির আওয়াজ। এবার সে আর পারছে না,এবার থামতেই হবে তাকে,নাহলে হয়তো হৃদপিন্ড ফেটে বেড়িয়ে আসবে,আর পারলো না, মাঠের মধ্যে ই পড়ে গেল সে, সাথে সাথে জ্ঞান ও হারালো।
জ্ঞান ফিরলো তার পরদিন সকালে দত্তদের বাড়ির উঠোনে। দত্তদের বড় ছেলে ভোর বেলা জেলে পাড়ায় মাছ আনতে যাচ্ছিলেন মাঠের উপর দিয়ে,তখন তাকে দেখতে পায় অজ্ঞান অবস্থায়,নাকের কাছে হাত এনে দেখে শ্বাস চলছে,তাই বাড়ি নিয়ে আসে সে।
অমলের হঠাৎ মনে পরে যায় কালরাতের সব ঘটনা,সে প্রশ্ন করে," আ. আমার বন্ধু অজয় কোথায়? সে ঠিক আছে তো?আপনারা কি ওই মাঠের পাশে রাস্তার মধ্যে আমার বন্ধুকে দেখতে পান নি?"
ওখানে উপস্থিত থাকা সকলে সবার মুখের দিকে তাকাতে লাগলেন!
ভীড়ের মধ্যে থেকে এক ব্যক্তি বললো-" আমরা তো ওই রাস্তা দিয়ে কয়েক বার যাতায়াত করলাম,কই কাওকে তো দেখলাম না,তবে রাস্তার মাঝে এই ব্যাগ আর টর্চ লাইট টা পেয়েছি! দেখোতো এটা তোমাদের নাকি?"
এই বলে ওই ব্যক্তি ব্যাগ ও টর্চ লাইট টা এগিয়ে দিলেন।
অমল বলল-" হ্যাঁ এ এগুলো আমার ই । কিন্তু অজয় কোথায় গেল? ওকে কি তাহলে?"
এবার সবাই দেখলো অমলের চোখের কোন ভিজে এসেছে।
দত্তবাড়ির বড় কর্তা এতক্ষনে বেড়িয়ে এলেন বাড়ির উঠোনে, যেখানে শোয়ানো ছিল অমলকে। তিনি সকলকে সরিয়ে অমলের সামনে এসে বসে বললেন- "কালরাতে কি হয়েছিল বলতো বাবা?"

প্রথম পর্ব


গল্পের দ্বিতীয় পর্ব-  তখন রাত দুটো (দ্বিতীয় পর্ব)

Post a Comment

0 Comments