নতুন ভূতের গল্প,তখন রাত দুটো,শেষ পর্ব,new horror story,Bengali horror story /

সকলেই কৌতুহল বসত তাকিয়ে থাকলো অমলের দিকে। কাল রাতের সমস্ত ঘটনা খুলে বললো অমল।সব শোনার পর ভীষন চিন্তিত দেখালো দত্তবাড়ির বড় কর্তাকে। কিছুক্ষন চুপ থেকে এবার তিনি বললেন- "তাহলে কি এখনও তাদের মুক্তি হয়নি, হা ঈশ্বর এবার তো ওদের মুক্তি দাও। এভাবে আর কত প্রাণ অকালে যাবে।"
বড় কর্তা র কথা শুনে তো উপস্থিত সকলে হতবাক, এ কি বলছেন তিনি? কার ই বা মুক্তি র কথা বলছেন?
কথাগুলো শোনার পর অমল কিছুটা হকচকিয়ে গিয়ে প্রশ্ন করল- "আ.. আপনি কি বলছেন আমি তো কিছুই বুঝতে পারলাম না? আপনি কি তাহলে জানেন সব ই? তাহলে চুপ না থেকে বলুন ? কে ওটা? আর আমার বন্ধু ই বা কোথায়?"
আক্ষেপ এর সুরে বড় কর্তা বললেন-" তুমি যাকে দেখেছো কাল,তারা একজন নয়, দুজন। একজনের নাম শিবু আর তার পুত্র পিলু। এ ঘটনা আজকের নয়, এটা ঘটেছিল আজ‌  থেকে প্রায় ৬০ বছর আগে। আমি তখন খুব ছোট, কিন্তু তখন আমার টনটনে জ্ঞান। দেশ স্বাধীন অনেক আগেই হয়েগেছে তবুও খুনোখুনি, হানাহানি লেগেই রয়েছে প্রায় প্রতিদিন এদেশে। তখন এখানে ঘর- বাড়ি প্রায় ছিল না বললেই চলে।হাতে গোনা কয়েকটি বাড়ি ছিল,তাও আবার খড়ের চাল দেওয়া মাটির বাড়ি। বাড়ি গুলির মধ্যে শেষ বাড়ি টি ছিল শিবুদের। খুব গরিব ছিল ওরা, একদিন খেতে পেলে দুদিন পেত না। শিবুর তখন একটি দুবছরের শিশু ছিল। শিবুর বউ পুকুর পাড় ,বন- বাদার থেকে তুলে আনতো কলমি শাক,গেড়ি,শামুক ,তাই খাইয়েই মানুষ করছিল শিশু টি কে। এভাবেই চলছিল ওদের জীবন কিন্তু কিছুদিন পর থেকে দেখা গেল শিবু বাড়িতে আসা কমিয়ে দিতে শুরু করলো, কিন্তু যখনই আসতো বউ, ছেলের জন্য ভালো ভালো জামা-কাপড়, খাবার দাবার সবই নিয়ে আসতো, কিছুদিন পরেই দেখা গেল শিবু দের মাটির বাড়ির জায়গায় ধীরে ধীরে গড়ে উঠতে লাগলো পাকা বাড়ি,যা এই এলাকায় কারোর ছিল না সেই সময়। শিবুর পরিবারের যখন দুমুঠো ভাত ও জুটতো না ,তখন এই প্রতিবেশী রা  ফিরেও তাকাতো না, কিন্তু আজ সকলে এবার খোঁজ নিতে শুরু করেছে শিবুর ব্যাপারে। শিবুর এত তাড়াতাড়ি কি ভাবে, এত পরিবর্তন হল তা জানার কৌতুহল সকলের দিনের দিন বাড়তে লাগলো।শিবু কিন্তু কাওকেই কিছু বললো না, সে কি কাজ করে? তবে শিবুর সেই সুখ বেশি দিন স্থায়ী হল না। আসলে শিবু জড়িয়ে পরেছিল সমাজ বিরোধী কাজের সঙ্গে। একথা ধীরে ধীরে জানতে পারে শিবুর বউ আর তার সাথে প্রতিবেশীরা ও। প্রতিবেশীদের মধ্যে বাড়তে থাকে আক্রোশ, বাড়তে থাকে হিংসা। তবে শিবু তার বউ এর অনুরোধে এবং ছেলের মাথায় হাত রেখে দিব্যি দেবার কারনে সে সরে আসে ওই নোংরা পথ থেকে। কিন্তু সরে আসি বললেই তো আর সরে আসা যায়না। কিছুদিন পর থেকেই সমাজ বিরোধী সঙ্গীরা তার বাড়িতে আসতে শুরু করে।  শিবুর বাড়ির ঠিকানা কিন্তু সে কাওকে দেয়নি,তাহলে এরা জানলো কিভাবে তার বাড়ি এখানে? বসে বসে ভাবে শিবু।  তাকে হুমকি ও দিয়ে যায় আবার যাতে তাদের সাথে পুনরায় কাজে নিযুক্ত হয়। কিন্তু  শিবু আর ও কাজ করতে রাজি নয় সে পষ্ট জানিয়ে দেয় তাদের। একদিন রাতে পরপর দুটি বিকট গুলির শব্দে হঠাৎ আমার ঘুম ভেঙে যায়, ঘড়ির দিকে তাকাতে দেখি  তখন রাত দুটো! আমরা সকলে ভয়ে কাঁটা হয়ে শুয়ে আছি। সেই রাত্রে আর কেউ বাইরে বের হল না। পরদিন সকালে সকলে গিয়ে উপস্থিত হয় সেই মাঠের ধারে রাস্তার উপর, যেখানে কাল তুমি তাদের দেখেছিলে। গিয়ে দেখি রাস্তার এক ধারে পড়ে রয়েছে শিবুর মৃতদেহ আর এ একপাশে শিবুর ছোট্ট ছেলেটার । দুজনেরই মাথায় গুলি করা হয়েছিল। এ দৃশ্য দেখে সকলেরই চোখে জল এল, অনেকে বলতে লাগলো- ওই দুধের শিশু কে কি কোনো মানুষ খুন করতে পারে! ওদের কি হাত একবার ও কাঁপলো না? তারপর দেখলাম কিছুক্ষণের মধ্যেই পুলিশ এসে লাশ দুটি কে তুলে নিয়ে চলে গেল। ভিড়ের মধ্যে থেকে কে যেন জিজ্ঞাসা করল- আরে শিবু আর ওর ছেলে টাকে শয়তান গুলো মেরে দিল, কিন্তু শিবুর বউ কোথায় গেল? ওকে কি তাহলে তুলে নিয়ে গেল ওরা? বাকিরা ও মুখ চাওয়া চাওয়ি করতে লাগলো, কিন্তু কেউই কিছু বলতে পারলো না! লাশগুলো কে পোস্ট মর্টাম এর জন্য রেখে পুলিশ আবারও এল এখানে? সকল কে জিজ্ঞাসা বাদ করতে লাগলো? কিন্তু কেউ ই কোনো উত্তর দিল না। আমি তখন বাবার কানে কানে বললাম- বাবা আমি কিন্তু শুনেছি কালকে একটা আওয়াজ,একটা নয় দুটো। বাবা আমার মুখটা চেপে ধরে রাখলো,বললো- একদম চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকবে, নাহলে তোমার আজ খাওয়া বন্ধ। আমি আর কিছু না বলে শুধু শুনেই গেলাম।তবে একজনকে বলতে দেখলাম পুলিশ কে,সে বলছে- স্যার এই শিবুর বউকে কিন্তু আর  কোথাও দেখতে পাওয়া যাচ্ছে না?
বেশ কিছুদিন যাবৎ পুলিশ শিবুর বউ এর অনুসন্ধান এ লাগলো, কিন্তু তাকে কেউ ই আর খুঁজে পেল না, শেষ মেষ পুলিশ তদন্ত বন্ধ করে দিলতারপর থেকে আজও কেউ জানলো না শিবুর বউ আদোউ বেঁচে আছে না মারা গেছে?
এই বলে থামলো বড় কর্তা।
অমল বলল- ওরা যদি দু'জন হয়, তাহলে কালতো একজনকে ই দেখেছি?
বড় কর্তা আবারও বললেন- তোমার মতো এ দৃশ্য অনেকেই দেখেছে, তবে সেই সময়। তোমার মতো ঠিক একই কথা বলেছিল তারা, প্রথমে একটি বাচ্চা ছেলের কান্নার শব্দ তারপর ভয়ানক হট্টহাসি আর এক পুরুষের মুখ বসানো এক শিশুর শরীর।এসব শুনে এলাকার লোকজন এক তান্ত্রিক কে নিয়ে আসে এখানে, তান্ত্রিক সব শুনে বলেন- অজ্ঞাতে মৃত্যু হওয়ার কারন শিবু ও তার ছেলের আত্মা শান্তি পায়নি,তাই তারা প্রতিশোধ নিতে আজ ও অপেক্ষা করে এইস্থানে। কিন্তু ঈশ্বর এর এক অপার্থিব লীলায় তাদের দুটি আত্মা মিলিত হয় একটি প্রেতাত্মায়।সে কারনে সেই শিশুর শরীরে যুক্ত হয় তার পিতার মুখমন্ডল। আমার ক্ষমতা নেই তাদের মুক্তি দেবার কিন্তু আমি তাদের আত্মার কে চির নিদ্রায় পাঠাতে পারি। এই বলে দু দিন না পর এক বিশাল যজ্ঞের আয়োজন করলেন তান্ত্রিক, যজ্ঞ  ঠিক মতো সম্পন্ন করে তান্ত্রিক বলেন- ওই প্রেতাত্মাকে আমি গভীর নিদ্রায় মগ্ন করেছি,তবে সে ভীষণ রুষ্ঠ হয়েছে সকলের প্রতি। এখন আর কোনো ভয় নেই, তবে একটি কথা তোমাদের সকলকে বলে দিই ,আমি যতদিন বেঁচে থাকবো, ততদিন সে নিদ্রায় আচ্ছন্ন থাকবে, কিন্তু আমার যেদিন মৃত্যু ঘটবে সেই দিন ই হবে ওদের নিদ্রাভঙ্গ। আর নিদ্রা ভঙ্গের পর ওরা হয়ে উঠবে আরও পৈশাচিক।তবে এখন তোমরা ভয় পেওনা,আমি এখনও বহুদিন বেঁচে থাকবো, হা হা হা হা।এই বলে চলে গেল তান্ত্রিক, তারপর থেকে সেই তান্ত্রিক কে আর কখনও দেখিনি আমি। তাহলে তান্ত্রিক হয়তো এতদিন পর এবার মারা গেছেন!  
কথাগুলো শেষ করে বড়কর্তা এক গ্লাস জল পান করলেন, এতক্ষণ সকলে অবাক দৃষ্টিতে সব কথা শুনছিলেন, কেউ কোনো সাড়া শব্দ করলো না ,
এবার অমল একটু ঢোক গিলে বলল- তাহলে আমার বন্ধু অজয় কে কি?
বড়কর্তা- হ্যাঁ, তোমার বন্ধুকে আর পাবেনা কোন দিন,কারন সে আর বেঁচে নেই। যারা যারা তাকে দেখেছে,তাদের মধ্যে কিছু জন বেঁচে ফিরে ছিল, বাকিরা আর ফেরেনি, এমনকি তাদের মৃতদেহ পর্যন্ত পাওয়া যায় নি।
কান্নায় ভেঙে পড়লো অমল.......
                             (সমাপ্ত)

                                    কলমে- অভিজিৎ দেয়াশী