বাড়িতে কিভাবে করতে হয় সিদ্ধিদাতা গণেশের পূজা? জেনে নিন / গনেশ পূজা / Ganesh chaturthi 2022 / Ganesh pujar montro.
Ganesh chaturthi 2022
মুম্বাইয়ের গনেশ পূজা |
নিজস্ব প্রতিবেদক- গনেশ চতুর্থী (ganesh chaturthi)এই অত্যন্ত গুরুত্যপূর্ণ দিনটিকে হিন্দুধর্মে বিনায়ক চতুর্থী ও (Vinayaka Chaturthi) বলা হয়ে থাকে । ১০ দিনের এই গণেশ চতুর্থী উৎসব হস্তী-মাথা বিশিষ্ট ভাগবান গণেশ এর জন্মকে চিহ্নিত করে থাকে। যা সমৃদ্ধি ও জ্ঞানের দেবতা বলে আমরা মনে করি। যা, ভাদ্র (আগস্ট-সেপ্টেম্বর) মাসের ঠিক চতুর্থ দিনে (চতুর্থি) থেকে শুভ সুচনা হয়ে থাকে। এই গনেশ চতুর্থী (ganesh chaturthi)উৎসবের শুরুতে, ভগবান গণেশের মূর্তিগুলি বাড়িতে সাজিয়ে বাইরের তাঁবুতে স্থাপন করা হয়ে থাকে। প্রাণপ্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এই গনেশ চতুর্থী পুজা (ganesh puja)শুরু হয়। মূর্তিগুলিতে প্রাণের আমন্ত্রণ জানানোর একটি আচার, ষোড়শোপচার, বা শ্রদ্ধা জানানোর ১৬টি উপায়। উল্লেখ্য, গণেশ উপনিষদের মতো ধর্মীয় গ্রন্থ থেকে বৈদিক স্তোত্রের উচ্চারণের মধ্য দিয়ে প্রতিমাগুলিকে লাল চন্দন কাঠের পেস্ট এবং হলুদ এবং লাল ফুল দিয়ে অভিষিক্ত করা হয়ে থাকে। গণেশকে নারকেল, গুড় এবং 21টি মোদক (মিষ্টি ডাম্পলিং) দেওয়া হয়, যা গণেশের প্রিয় খাবার হিসাবে বিবেচিত হয়ে থাকে।
এই গনেশ চতুর্থী উৎসবের (ganesh chaturthi)শেষে, গণেশ মূর্তিগুলিকে নদীতে নিয়ে যাওয়া হয় -যা ,বিশাল শোভাযাত্রায় ঢোল, ভক্তিমূলক গান এবং নাচের সাথে তাল মিলিয়ে বর্নাঢ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সেখানে তারা বিসর্জন দিয়ে থাকেন | সবাই মনে করেন যে ,এটি ভগবান (lord ganesha)গণেশের কৈলাস পর্বতে-তার পিতামাতা, শিব এবং পার্বতীর গৃহস্থলে গৃহমুখী যাত্রার প্রতীক।
গনেশ পূজা হিন্দু ধর্মের মানুষদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি পূজা। এটি বহু প্রাচীনকাল থেকে উদযাপন হয়ে আসছে । গণেশ কে সিদ্ধিদাতা বলা হয় গণেশের কাছে মানুষ ধন, জ্ঞান, সন্মান, যস, প্রতিপত্তি ইত্যাদি চেয়ে থাকে । ভারত ও বাংলাদেশের কিছু এলাকা সহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে মহা উৎসাহের সহিত গনেশ পূজা পালিত হয়ে আসছে । কিন্তু বর্তমান সময়ে কিভাবে বাড়িতে নিজেরাই পুজা করবেন সে বিষয় আলোচনা করব ।
পুজার দিন সকালে পুরো বাড়ি ভাল করে পরিস্কার পরিছন্ন করতে হবে। তার পর গনেশ মূর্তি আনতে হবে । মুর্তি আসনে না বসা পর্যন্ত মুর্তির মুখে সাদা কাপড় দিয়ে ডেকে দিতে হবে ।
(প্রয়োজনীয় উপকরণ)
ধুপ, গণেশের জন্য নতুন কাপড়, সুপারি, পান, চন্দন কাঠ , কলা, নারিকে্ল , লাল ফুল, দুর্বা ঘাস ইত্যাদি ।
(প্রসাদ তৈরি)
গণেশের আরেক নাম মোদক প্রিয় । তাই গনেশ পূজায় অবশ্যই মোদক দিতে হবে ।মোদক তৈরি করা হয় নারকেল ও গুড়ের পুর কে ময়দার মধ্যে ঢুকে তৈরি করা হয় । মুরির মোয়া গনেশের প্রিয় ।
(গণেশ পূজার বাসন)
গণেশ পূজার বাসন কেমন হবে ? গণেশ পূজার বাসন হিসেবে তামার বদলে রুপোর বা রুপালি বাসন ব্যবহার করা দরকার। রুপোর বাসন যদি কোন পূজায় ব্যবহার করা হয় তাহলে বাড়ির সদস্যদের সৌভাগ্য ভালো হয় ।
বাড়ির কোন দিকে রাখতে হবে গণেশ মূর
বাড়ির উত্তর-পূর্ব দিকে বা একেবারেই পশ্চিম দিকে গণেশের মূর্তি প্রতিষ্ঠা করলে সমৃদ্ধি ভালো হয় । শোবার ঘরে মূর্তি প্রতিষ্ঠা না করাই ভাল ।
(পূজা পদ্ধতি)
ওম গাং গনপতয়ে নমঃ মন্ত্র উচ্চারণ এর মাধ্যমে শুরু হয় গণেশ আরাধনা ।আরতির থালা সুগন্ধি ধূপ জ্বালিয়ে সূচনা করুন গণেশের পুজোর । এরপর চন্দনকাঠের সামনে সাজিয়ে রাখুন পান পাতার উপর সুপারি । যারা গণেশ চতুর্থীর আগেই বাড়িতে মূর্তি নিয়ে এসেছেন তারা নির্দিষ্ট দিনের আগে পর্যন্ত কাপডুরুদিয়ে বিগ্রহের মুখ ঢেকে রাখুন । নিদিষ্ট দিনে মূর্তি স্থাপনের আগে খুলবেন না । গণেশ মূর্তি নিয়ে ঘরে প্রবেশের আগেই চাল চড়াতে ভুলবেন না ।
গণেশের প্রাণ প্রতিষ্ঠা পর শুরু হবে পুজা ।ঋকবেদে বা গনেশ সুক্তায় পাবেন প্রাণ প্রতিষ্ঠার মন্ত্র। প্রান প্রতিষ্ঠার পর শুরু করুণ আরতি । এরপর ষোড়শোপচারে গনেশ আরাধনা করুন । গনেশ বন্ধনায় ১৬ টি রিতির নামেই ষোড়শোপচার । এরপর ২১ টি দুর্বা ঘাস, ২১ টী মদক, ও লাল ফুল সাজিয়ে রাখুন হনেশের সামনে । মূর্তির মাথায় আখুন লাল চন্দনএর টিকা । এরপর গনেশের মুর্তির সামনে নারকেল ভেঙ্গে অসুভ শক্তিকে দূর করুন । গনেশের ১০৮ টি নাম জব করুন । মুর্তি সামনে করজোরে প্রর্থনা করুনপরিবারের সুখ সমৃদ্ধি ।
ওঁ শ্রী গণেশায় নমঃ’ বা ‘ওঁ গাং গণেশায় নমঃ ওঁ শ্রী গণেশায় নমঃ’ বা ‘ওঁ গাং গণেশায় নমঃ
এখন জেনে নেওয়া যাক গণেশ পূজার মন্ত্র প্রসঙ্গে:-
(গণেশ পূজা মন্ত্র)
একদন্তং মহাকায়ং লম্বোদর গজাননম।
বিঘ্নবিনাশকং দেবং হেরম্বং পনমাম্যহম।।
অর্থাৎ, যিনি একদন্ত, মহাকায়, লম্বোদর, গজানন এবং বিঘ্ননাশকারী সেই হেরম্বদেবকে আমি প্রণাম করি।
(ধ্যান মন্ত্র)
ওঁ খর্বং স্থূলতনুং গজেন্দ্রবদনং লম্বোদরং সুন্দরং
প্রস্যন্দম্মদগন্ধলুব্ধ মধুপব্যালোলগণ্ডস্থলম্।
দন্তাঘাত বিদারিতারিরুধিরৈঃ সিন্দুরশোভাকরং,
বন্দেশৈল সুতাসুতং গণপতিং সিদ্ধিপ্রদং কামদম্।।
(গণেশ বন্দনা)
বন্দ দেব গজানন বিঘ্ন বিনাশন।
নমঃ প্রভু মহাকায় মহেশ নন্দন।।
সর্ববিঘ্ন নাশ হয় তোমার শরণে।
অগ্রেতে তোমার পূজা করিনু যতনে।।
নমো নমো লম্বোদর নমঃ গণপতি।
মাতা যার আদ্যাশক্তি দেবী ভগবতী।।
সর্বদেব গণনায় অগ্রে যার স্থান।
বিধি-বিষ্ণু মহেশ্বর আর দেবগণ।।
ত্রিনয়নী তারার বন্দিনু শ্রীচরণ।
বেদমাতা সরস্বতীর লইনু শরণ।।
মন্ত্রঃ – ওঁ গাং গণেশায় নমঃ।
প্রণাম মন্ত্র
একদন্তং মহাকায়ং লম্বোদর গজাননম।
বিঘ্নবিনাশকং দেবং হেরম্বং পনমাম্যহম।।
অর্থাৎ,যিনি একদন্ত, মহাকায়, লম্বোদর, গজানন এবং বিঘ্ননাশকারী সেই হেরম্বদেবকে আমি প্রণাম করি।
ওঁ সর্ববিঘ্ন বিনাশয় সর্বকল্যাণ হেতবে।
পার্বতী প্রিয় পুত্রায় গণেশায় নমো নমঃ।।
এই ভাবেই আপনারা বাড়িতে গনেশ পুজা করতে পারবেন।
এবার পড়ুন- সব পূজার আগে গনেশের পূজা কেন করা হয়,জানেন কি?
Post a Comment
0 Comments