শব্দ দূষণ এর বিরুদ্ধে লড়ুন-

আইনিভাবে শব্দ দূষণ রুখতে কি কি কড়া ব্যবস্থা নেওয়া উচিত? effects of sound pollution. Sound pollution rules.


আইনিভাবে শব্দ দূষণ রুখতে কি কি কড়া ব্যবস্থা নেওয়া উচিত?, effects of sound pollution, Sound pollution rules,

উন্নত পরিবেশ প্রতিটি মানুষের পছন্দের, এটা আর নতুন করে বলার কিছু নেই। যদি অতিরিক্ত শব্দ আপনার কানে এসে পৌঁছায় সর্বদাই, তাহলে আপনি অতিষ্ঠ হয়ে উঠতে বাধ্য হবেন। কেননা এটাই স্বাভাবিক।

সহ্যের সীমার বাইরে যখন অতিরিক্ত আওয়াজ অথবা শব্দ হতে থাকে, তখন সেটা বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়, তার সাথে সাথে শারীরিক এবং মানসিক অসুস্থতার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

এছাড়া দেখা যায়, আশেপাশের পরিবেশের বা পাড়া-প্রতিবেশিতে কোন রকম অনুষ্ঠান, পার্টি,কল-কারখানা এই সমস্ত বিষয়ের উপলক্ষে খুব জোরে গান-বাজনা চালানো বা শব্দ উৎপন্ন হয়ে থাকে, সেটা আপনার অসুবিধার কারণ হতেই পারে।

এমনও হয়েছে যে, সারা রাত ধরে গান বাজনা খুবই লাউড স্পিকার অথবা খুবই জোরে চালানো হয়, আশেপাশের পরিবেশে যেটা কোন সুস্থ স্বাভাবিক মানুষের সারা রাতের ঘুম কেড়ে নিতে পারে অথবা তার মানসিক অসুস্থতার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারেন।
এছাড়া রাস্তায় বের হলে, গাড়ির অযথা হর্ন এর আওয়াজ, শব্দ দূষণের আরেকটি কারণ। যানবাহনের আওয়াজ, নির্মাণ কাজের আওয়াজ, কারখানা, গান-বাজনার আওয়াজ, সব মিলিয়ে ভারতে শব্দ দূষণের মাত্রা চরমসীমায় পৌঁছেছে।

একটা কথা বলা যেতে পারে যে, একটা সীমার উপরে শব্দ তৈরি হলে সেটা শব্দদূষণ হিসাবে গণ্য করা হয়। অর্থাৎ ডেসিমেল অনুযায়ী যেকোনো অনুষ্ঠানে গান বাজনা আস্তে চালানো যেতেই পারে, তাই না! সীমাহীন ভাবে যখন শব্দদূষণ হয়ে থাকে, তখন কিন্তু আমরা ভাবতেই পারি যে, এই সমস্ত বিষয়ের বিরুদ্ধে লড়াই করা আমাদের হাতের মধ্যে নেই। কিন্তু এই ধারণা একেবারেই ভুল।

শব্দ দূষণের বিরুদ্ধে একটি সাধারণ মানুষ অথবা সাধারণ জনগণ আইনি পদক্ষেপ নিতে পারেন। আপনার সমস্যা অনুযায়ী অভিযোগ দায়ের করতে পারেন।

এমন পরিস্থিতিতে সমস্যার সমাধান করার জন্য আপনি কি করতে পারেন ?

(১)- যে কোন অনুষ্ঠানে গান বাজনা চালানো, কল-কারখানায় অতিরিক্ত শব্দ আইন অনুসারে একটা সীমার নিচে যেন থাকে। তার উপরে গেলে আপনাকে কিন্তু জেলেও যেতে হতে পারে। শব্দ দূষণ শুধুমাত্র অসুস্থ ব্যক্তিই নয়, বাচ্চা থেকে শুরু করে সমস্ত মানুষের হার্ট অ্যাটাকের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।


আর যারা এমন পরিস্থিতি তৈরি করেন তারাও কিন্তু সাবধানে থাকবেন যে, এর বিরুদ্ধে আইন কিন্তু খুবই কড়া পদক্ষেপ গ্রহণ করে। শব্দ দূষণ কে সম্পূর্ণ রূপে বায়ু দূষণের পর্যায়ে ফেলা হয়। কেননা বায়ুদূষণ যেমন মানুষের শরীরের অনেক ক্ষতি করে তেমনি শব্দ দূষণ শরীরের সাথে সাথে মানসিক স্বাস্থ্যকে অনেক খানি ক্ষতি করে।


আর সেই কারণেই কখনোই ভাববেন না যে, এমন পরিস্থিতির বিরুদ্ধে আপনি কখনোই লড়াই করতে পারবেন না। আপনার আশেপাশে, পাড়া-প্রতিবেশী যদি এমন পরিস্থিতি তৈরি করে থাকেন, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আপনি আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারবেন অনায়াসেই। ভারতীয় আইন আপনার পাশে আছে।

আইনিভাবে শব্দ দূষণ রুখতে কি কি কড়া ব্যবস্থা নেওয়া উচিত? effects of sound pollution. Sound pollution rules.


(২) - আপনাকে যে দ্বিতীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে সেটি হল, সরাসরি পুলিশ ডাকতে পারেন। তারপর পুলিশকে সমস্ত রকম শব্দ দূষণের সমস্যা সম্পর্কে সুন্দরভাবে বিবরণ দিতে পারেন, আপনার আশেপাশে কোন অনুষ্ঠানে যদি উচ্চস্বরে গান-বাজনা চলে থাকে সে ক্ষেত্রে। আপনি বলতে পারেন যে, এমন শব্দ দূষণ আপনার মাথা যন্ত্রণার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে, যার ফলে আপনি মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। এটাও বলতে পারেন যে, যখন থেকেই এমন শব্দ দূষণ শুরু হয়েছে সেখান থেকেই অনবরত এমনটাই চলছে, কোনরকম আশেপাশে অসুবিধার কথা গ্রাহ্য না করেই। এমনভাবে সমস্ত রকম তথ্য দিয়ে পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করতে পারেন।

২) এছাড়া দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ড এর কাছে আবেদন করতে পারেন অথবা অভিযোগ দায়ের করতে পারেন। কেননা শব্দ দূষণ কিন্তু বায়ু দূষণ হিসাবে নির্বাচন করা হয়েছে। কেননা বায়ু দূষণের মত শব্দ দূষণও কিন্তু মানুষকে অসুস্থ করে তোলে।

এখানে কিছু পদক্ষেপ আছে যেগুলো আপনি গ্রহণ করতে পারেন :

১) শব্দ দূষণের বিরুদ্ধে কোনো রকম পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য সিভিল প্রক্রিয়া সি আর পি সি (CRPC) ধারা 91 তে বলা হয়েছে আপনি একটি সিভিল এর সাহায্যে সার্বজনীন  উপদ্রব এর অপরাধের জন্য একটি  মামলা দায়ের করতে পারেন।

এই ধারা অনুসারে যে ব্যক্তির অসুবিধা হচ্ছে শব্দ দূষণের কারণে, সেই ব্যক্তি উপযুক্ত সমাধানের জন্য মামলা শুরু করতে পারেন। যেমন ধরুন নিষেধাজ্ঞা অর্থাৎ যদি উচ্চস্বরে গান-বাজনা চলে থাকে সেটা একেবারে বন্ধ করে দেওয়ার মত সমাধান যেন সেই ভুক্তভোগী ব্যেক্তি পেয়ে থাকেন।
২) শব্দ দূষণের এমন অপরাধের বিরুদ্ধে শাস্তি হিসেবে সম্পূর্ণরূপে সেই গান-বাজনার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা যায়।আর কখনও ই গান চালানো যাবে না। ঠিক এমনভাবে যে ব্যক্তির সমস্যা তৈরি হয়েছে এমন উপদ্রব এর জন্য, সেই ব্যক্তি উপযুক্ত সমাধান পাবেন আইন অনুসারে।

৩) শাস্তি প্রক্রিয়া সি আর পি সি (CRPC) এর ধারা 133 এর মাধ্যমে অপরাধের ক্ষেত্রে এক সাথে সমাধানের খোঁজ করা যেতেই পারে। এই ধারা অনুসারে ম্যাজিস্ট্রেটকে উপদ্রব শুরু করার পরিস্থিতি সম্পূর্ণ রূপে বন্ধ করার অনুমতি দিয়ে থাকে। এর মানে হল ম্যাজিস্ট্রেট এমন উপদ্রব শুরু করার গতিবিধি কে সম্পূর্ণরূপে আটকানোর পারমিশন দিতে পারেন।

৪) ভারতীয় সংবিধান অনুচ্ছেদ 32 অনুযায়ী সর্বসাধারণের স্বাভাবিক জীবনযাপনের জন্য শব্দ দূষণের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করতে পারেন এবং সেই মামলা চালাতে পারেন। এই অধিকার কিন্তু আপনার কাছে আছে। দরকার পড়লে উচ্চ বিচারালয় অথবা সরাসরি সুপ্রিম কোর্টে ও আপনি অভিযোগ দায়ের করতে পারেন।
সি আর পি সি (CRPC) ধারা 133 অনুসারে। আর এই আইন জনসাধারনের জন্যই প্রযোজ্য। তাই বিনা দ্বিধায় আপনার আশেপাশে সমস্ত রকম শব্দ দূষণের বিরুদ্ধে আপনি কথা বলতে পারেন সম্পূর্ণ আইনি পদ্ধতিতে।

এছাড়া এমনও হতে পারে যে, কোন বাড়িতে অসুস্থ ব্যক্তি রয়েছেন, শব্দদূষণ সাধারণ মানুষের জীবনে অনেক খানি ক্ষতি ডেকে নিয়ে আসে তাহলে একবার ভেবে দেখুন, যে ব্যক্তি অসুস্থ হয়েছেন সেই ব্যক্তির ক্ষেত্রে কতটা অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি হয় এবং তার সাথে শারীরিক ও মানসিক সমস্যা তৈরি করতে পারে !




আইনিভাবে শব্দ দূষণ রুখতে কি কি কড়া ব্যবস্থা নেওয়া উচিত? effects of sound pollution. Sound pollution rules.