রক্ত হিম করা ভুতের গল্প- পাতালপুরীর রক্তখাদক (পর্ব ২)। New Bengali horror story. Patalpurir raktokhadak
আজকের গল্প - পাতালপুরীর রক্তখাদক (পর্ব-২)
রিক্সা স্ট্যান্ডে এসে দেখে, স্ট্যান্ডে থাকা শেষ রিক্সাটিও বেড়িয়ে যাচ্ছে সঙ্গে দুজন যাত্রী নিয়ে।
এই দেখে শুভজিৎ বলে উঠলো - আরে এখানে তো আর একটাও রিক্সা নেই,আর লাস্ট রিক্সাটা ও বেড়িয়ে যাচ্ছে,এবার আমরা যাব কিসে ? ভাগ্যে মনে হয় আমাদের ভোগান্তি ই আছে , আচ্ছা এখানে কি আর অন্য কোনো যানবাহন চলে না?
অনিমেষ বলল- আমি যতবার এখানে এসেছি, ততবারই এই স্টেশন এ নেমে রিক্সা করেই গেছি , তবে রিক্সা ছাড়াও এখানে কিছু টেকার ও চলতে দেখেছি কিন্তু আজতো দেখছি তারও দেখা নেই।
স্টেশন এর আশেপাশে যেসব দোকান আছে, তারাও সবাই ঝাঁপ বন্ধ করে বাড়ির পথে রহনা দিয়েছে, একটি দোকান সবেমাত্র দোকান বন্ধ করার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে, তখনই দুই বন্ধু দৌড়ে গেল সেই দোকানের কাছে।
অনিমেষ - বলছি দাদা,আমরা বড় বিপদে পড়েছি, আসলে ট্রেন টাও লেট করেছে আবার এখানে কোন রিক্সা ও পেলাম না, এখন যে কি করি! আচ্ছা দাদা এখানে কি রিক্সা ছাড়া টেকার বা অন্য কোনো গাড়ি চলছে না? কারন শেষ রিক্সা টি আমাদের আসার সাথে সাথেই অন্য যাত্রী নিয়ে চলে গেছে।
মধ্যবয়স্ক দোকানদার টি বলল - তা বাবুমশাইরা কোথা থেকে আসতেছেন?আর যাবেনই বা কোথায়?
অনিমেষ - আমরা আসছি কলকাতা থেকে আর যাব তিলজলা গ্ৰামে।
কিছুটা হকচকিয়ে দোকানদার - তিলজলা গ্ৰামে?
অনিমেষ - হ্যাঁ , আপনি বলুন এখান থেকে আর কোনো গাড়ি পাওয়া যাবে কি না? এমনিতেই আমাদের অনেক লেট হয়েছে।
দোকানদার - আসলে এখানে সন্ধ্যে হয়ে গেলে আর কেউই থাকেনা,সবাই নিজের কাজ শেষ করে বাড়ির দিকে এগোয়।তবে আজ ট্রেন লেট করায়, কিছু রিক্সা স্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে ছিল প্যাসেন্জার আসার অপেক্ষায়,পেসেঞ্জার এলে পরে তাদের নিয়ে চলে যায়, তাই বাবুমশাইরা মনে হয় স্টেশন থেকে নামতে দেরি করেছেন, তাই রিক্সা পাননি। আর টেকার তো কবেই বন্ধ হয়ে গেছে এখানে, এখানকার রাস্তা আগে কিছুটা ভালো ছিল তাই টেকার চলতো, কিন্তু এখন একেবারে জঘন্য অবস্থা, রাস্তার চারিদিকে খানা খন্ডে ভর্তি সেকারনে টেকার যাওয়া বন্ধ হয়ে গেছে।আমার বাড়ি তিলজলার গ্ৰামের আগের গ্ৰাম, আমি সাইকেল নিয়ে ই যাওয়া আসা করি, কিন্তু আপনারা তো দুজন তাই আপনাদের সাহায্য করতে পারলাম না,এখন আপনাদের হেঁটে যাওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।
বিষন্ন মুখে অনিমেষ বলল - হেঁটে যেতে হবে ! রিক্সা করে যেতেই তো প্রায় ৩০ মি: সময় লাগে তাহলে তো হেঁটে গেলে ১ ঘন্টার ও বেশি সময় লাগবে!
শুভজিৎ - তাছাড়া আরতো কোনো উপায় ও নেই! আর হাঁটতে আমার ভালোই লাগে, তবে আমার অসুবিধা হল একেই ঘুটঘুটে অন্ধকার, আবার তার সাথে এই ঠাণ্ডা হিমেল বাতাস শীতে কাঁপুনি ধরিয়ে দিচ্ছে গোটা শরীরে। তবে তুই রাস্তা জানিসতো?
অনিমেষ- রাস্তা মোটামুটি জানি, তবে এই নিকোশ কালো অন্ধকারে আমার পক্ষে রাস্তা চেনা অসম্ভব।
দোকান বন্ধ করে, দোকান এর পাশে হেলান দেওয়া সাইকেল টি তুলে দোকানদার বলল - চিন্তা করবেন না বাবু মশাই রা, আমি নিয়ে যাব আপনাদের।আমরা সবাই হেঁটে ই যাব।আপনাদের এই দুঃসময়ে সাহায্য করাটা আমার কর্তব্য। চলুন বাবুরা...
অস্বস্তি তে থাকা দুই বন্ধু দোকানদার এর কথা শুনে কিছুটা স্বস্তি ফিরে পেল। তারাও দোকানদারের পেছন পেছন চলতে লাগলো।
গ্ৰামের সরু মেঠো পথ দিয়ে হেঁটে চলল তিনজন, রাস্তার দুধারে বিস্তীর্ণ জলা জমির উপর দিয়ে বয়ে আসা দমকা শীতল বাতাস গায়ে কাঁপুনি ধরিয়ে দিল সবার। তখন সন্ধ্যে ৭টাও বাজেনি, কিন্তু চারিদিক অসম্ভব নিস্তব্ধতা, শুধু শোনা যাচ্ছে ঝিঁঝিঁ র ডাক,আর সাথে মাঝে মাঝে সূদুর প্রান্ত থেকে ভেসে আসছে শেয়ালের কলরব।
কিছুটা পথ এগোতে ই, পথের মাঝে পরে থাকা একটি পাথরে হোঁচট খেয়ে টাল সামলাতে না পেরে মাটি পড়ে যাচ্ছিল শুভজিৎ, সঙ্গে সঙ্গে পাশ থেকে অনিমেষ তার হাত টি শক্ত করে ধরে ফেলায় মাটিতে আছাড় খাওয়ায় হাত থেকে রক্ষা পেল সে।
অনিমেষ -আরে তুই ঠিক আছিসতো ? যা রাস্তার অবস্থা,এখনি একটা বিপদ ঘটতো। সঙ্গে একটাও টর্চ ও নেওয়া হয়নি,যার ফল আমাদের পদে পদে পেতে হচ্ছে।একটু সাবধানে আয়।
শুভজিৎ - এ যাত্রায় তো তোর হাত ধরে বেঁচে গেলাম, রাস্তার অবস্থা সত্যিই খুব খারাপ।
বলাবাহুল্য দোকানদারের হাতে একটি টর্চ ছিল, সেটি সামনের দিক থেকে পিছনে ফেলে দোকানদার বলল - বাবুরা একটু সাবধানে আসুন,আমিতো আগেই বলেছি এ রাস্তা একেবারে জঘন্য। বেশ কিছুদিন আগে এক বৃষ্টির দিনে এক ব্যক্তি সন্ধ্যে র পর এই রাস্তা দিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন কিন্তু ভাগ্যের পরিহাস, রাস্তার পাড় ধসে গিয়ে তিনি সাইকেল সমেত পড়লেন বামদিকের এই গভীর জলায়,পরদিন জলায় ভেসে ওঠে তার লাশ।তাই বলছি আমাকে অনুসরণ করুন,আমি যেদিক দিয়ে যাচ্ছি সেই দিক দিয়ে আসুন।
রাস্তায় আর কেউ কোনো কথা বলল না। অতিকষ্টে দীর্ঘ পথ অতিক্রম করে অবশেষে এসে পৌঁছল তিলজলা গ্ৰামের আগের গ্ৰাম পাটজলা গ্ৰামে।
দোকানদার - ওই যে দেখছো সামনের মাটির দুতলা বাড়ি,ওটি ই আমার বাড়ি। এই নাও বাবুরা।
এই বলে হাতে থাকা টর্চ টি এগিয়ে দিয়ে বলল-
দোকানদার - ওই যে দেখছো দান দিকে রাস্তা টি বেঁকে গেছে, ও পথ দিয়ে মিনিট পাঁচেক হেঁটে গেলেই তিনজলা গ্ৰাম। আর টর্চটি তোমাদের কাছে রাখো, বাড়ি ফেরার সময় মনে করে ফেরৎ দিয়ে যেও। এখন তোমরা যাও, তবে একটা কথা শুধু রাস্তা র দিকে চেয়েই হাঁটবে। এদিক ওদিক তাকানোর কোন প্রয়োজন নেই।
বিনম্র ভাবে অনিমেষ বলল - আপনাকে যে কি বলে ধন্যবাদ জানাবো!
দোকানদার- না,না এটা তো আমার কর্তব্য।আর বেশি দেরি করবেন না, এমনিতেই রাত প্রায় আট টা বেজে গেছে, এখন আপনারা যান।
এই বলে দোকানদার চলে গেল নিজ বাড়ির দিকে। এদিকে দুই বন্ধু ও রহনা দিল গন্তব্যের উদ্দেশ্যে, যেতে যেতে শুভজিৎ বলল - আচ্ছা তোদের গ্ৰামেতো মানুষ মরছে , সেখানে মানুষ ভীত হয়েই সন্ধ্যে র পর না হয় কেউ বাইরে বের হচ্ছে না কিন্তু এই গ্ৰামে এত নিস্তব্ধতা কেন ?
অনিমেষ - আমি জ্ঞানত দেখেছি বা জেনেছি এখানকার মানুষ জন একটু তাড়াতাড়ি ই নিদ্রায় মগ্ন হয় এবং তেমনি তাড়াতাড়ি মানে ভোরবেলায় ই নিদ্রাভঙ্গ হয় ,আর হয়ত পাশের গ্ৰামে আতঙ্ক এই গ্ৰামে ছড়িয়েছে,তাই এই নিস্তব্ধতা।
কিছুক্ষণের মধ্যে অনিমেষ অন্ধকার আচ্ছন্ন গ্ৰামের মধ্যেই খুঁজে নিল নিজ ছোট কাকার বাড়ি। দরজায় টোকা দিলেন অনিমেষ ।
ভিতর থেকে এক পুরুষ কন্ঠ শোনা গেল -
কে......
পুরুষ কন্ঠ টি তার ছোট কাকার তার বুঝতে অসুবিধা হয় নি অনিমেষের।
অনিমেষ বলল - ছোট কাকা আমি অনিমেষ,তোমার বড় ভাইপো , কলকাতা থেকে আসছি, দরজা খোলো।
তৎক্ষণাৎ দরজা খোলার শব্দ। হন্তদন্ত হয়ে ছোট কাকা তাদের তাড়াতাড়ি বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করিয়ে দরজায় খিল এঁটে দিলেন,তারপর তাদের নিয়ে গেলেন ভিতরের ঘরে।
ছোটকাকা - তোরা এই এত অন্ধকারে এই সময় এলি কিভাবে ? আমিতো তোদের আনতে গিয়ে ছিলাম, কিন্তু প্রায় ঢেড়-ঘন্টা অপেক্ষা করার পর ট্রেন আসছে না দেখে, এদিকে সন্ধ্যে নামতে চলল, তাই ফিরে এলাম। আমি ভেবেছিলাম তোরা হয়তো আর আসবি না।
শুভজিৎ কে উদ্দেশ্য করে ছোটকাকা বললেন -
তোমাকে আবার তুই বললাম বলে কিছু মনে করোনা বাবা!
শুভজিৎ - আরে না,না , আমি তো আপনার ভাইপোর ই বন্ধু, আমাকে তুই করেই বলবেন।
অনিমেষ বলল - আসলে আমরা স্টেশনের পাশে এক দোকানদারের সাহায্যে এতটা পথ হেঁটে আসতে পেরেছি, তিনি আমাদের পথ দেখিয়েছেন।
ছোট কাকা - তোরা এতোটা পথ হেঁটে এসেছিস?কেনো কোনো রিক্সা পাসনি?
অনিমেষ - না। সেই কারনেই তো হেঁটে আসা।
ছোটকাকা - তাহলে তো খুব কষ্ট হয়েছে তোদের, আচ্ছা এবার কলতলায় গিয়ে ভালো করে হাত মুখ ধুয়ে আয় দেখি, তারপর খাওয়া দাওয়া করে শুয়ে পরবি,কাল কথা হবে।
সত্যিই আজ শরীরে বড্ড ধকল গেছে,তাই আর কথা না বাড়িয়ে যথারীতি দুজনে হাত মুখ ধুয়ে,তারপর খাবার খেয়ে চলে গেল শুতে।
পরদিন সকাল
অনিমেষের ঘুম ভাঙতে দেখলো,জানলার ফাঁক দিয়ে শীতের সকালের স্নিগ্ধ সূর্যের আলো প্রবেশ করেছে আর সেই আলো এসে পড়েছে তার বন্ধু র মুখের উপর। অনিমেষ তার বন্ধু র কাঁধটা ছাকিয়ে দিয়ে বলল-
কিরে এবার উঠ। উঠে ফ্রেশ হয়ে নে আমাদের একবার বেড়োতে হবে।
শুভজিৎ ঘুম জড়ানো চোখে বলল - এত সকাল সকাল আবার কোথায় যাবি?
অনিমেষ - সব বলবো, তুই আগে ওঠ।
যথারীতি দুই বন্ধু ফ্রেশ হয়ে,চা খেয়ে বেড়িয়ে পড়লো পুরো গ্ৰাম প্রদক্ষিণ করতে। বাঁশঝাড় ও হোগলা দ্বারা পরিবেষ্টিত একটি সুন্দর গ্ৰাম। কিছুটা আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে এই গ্ৰামে। গ্ৰামের কিছু চেনা পরিচিত লোকের সঙ্গে আলাপ করে দুপুরের দিকে কাকার বাড়িতে ফিরে এল দুজনে।
ছোট কাকা- কিরে তোরা সেই সকাল থেকে এই বেলা অবধি ছিলি কোথায়?
অনিমেষ - কত দিন পর গ্ৰামে এসেছি, তাই একটু ঘুরতে বেরিয়েছিলাম, কিন্তু আজ সকালে ই মন্ডল পাড়ায় ঢুকতে ই আর ও একটি মৃত্যু র খবর পেলাম। খুব ই মর্মান্তিক, সেই একই, রক্তশূন্য হয়ে মৃত্যু, আচ্ছা কাকা তুমি যতটুকু শুনেছো বা জানো,সেটা আমাকে খুলে বলতো?
ছোট কাকা - ওসব কথা পরে হবে, এখন খেয়ে দেয়ে একটু বিশ্রাম নে, তারপর বিকেলে মাঠ থেকে ফিরে সব বলবো।
এই বলে সবাই বাড়ি র ভেতর ঢুকে গেল।
বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হবার মুখে মাঠ থেকে বাড়ি ফিরলেন ছোট কাকা। ক্ষানিক পর চা সহযোগে উঠোনে এসে বসলেন তিনজন।
ছোট কাকা বললেন - বুঝলে বাবা অনিমেষ, আজ মাঠ থেকে ফেরার পথে মোরল মশাই এর সাথে দেখা হয়ে ছিল আমার। উনি বিষন্ন মুখে আমাকে বললেন - সূর্যকান্ত বাবু আপনার সাথে কিছু কথা ছিল!
আমি বললুম,বলুন কি বলবেন। এই বলে ওনার সাথে বেশ কিছু কথা হল আমার।
উনি বললেন -
আমাদের এই গ্ৰামে যেভাবে মৃত্যু মিছিল শুরু হয়েছে , তাতে মনে হয় আর কিছু মাসে র মধ্যে পুরো গ্ৰামটাই শ্মশানে পরিনত হবে, দাহ করার লোক পর্যন্ত থাকবে না।
ছোট কাকা - কিন্তু মোরল মশাই এভাবে চুপ করে বসে থাকলে কি করে হবে? কিছুতো একটা করতে হবে? চিকিৎসকেরা তো কোনো রোগ ধরতে পারছে না, আর এদিকে একের পর এক মানুষ মারা যাচ্ছে ঠিক একই ভাবে।
মোরল মশাই বললেন - আরে বাবা এটা ডাক্তারদের কাজ নয়। এটা চিকিৎসা বিজ্ঞানের বাইরে। এটা কোন এক নর পিশাচের কাজ। যে সমগ্ৰ লোক চক্ষুর আড়ালে করে চলেছে এই নিষ্ঠুর হত্যালীলা। আমাদের গ্ৰামে কোনো এক অপশক্তির কাল দৃষ্টি পরেছে। সেই উজার করে দিতে চাইছে গোটা গ্ৰামটাকে। আমারতো এটাই মনে হচ্ছে। যদি তাই হয়, তা আমি বেঁচে থাকতে এই গোটা গ্ৰামকে কখনোই নিশ্চিহ্ন হতে দেবো না, কথা দিলাম।
ছোট কাকা - আপনার অনুমান যদি সত্যিই হয়, তাহলে এখন করনীয় কি?
মোরল মশাই- সে ব্যবস্থা আমি করেছি। এখান থেকে প্রায় বিশ ক্রোশ দূরে এক আদিবাসী গ্ৰাম আছে, গ্ৰামের নাম হাঁকিনিতলা। এই গ্ৰামের দক্ষিণ প্রান্তে পিশাচ তন্ত্রসাধক এক তান্ত্রিক থাকেন। বেশ নাম করা তান্ত্রিক। অপশক্তি দ্বারা এমন কোন সমস্যা নেই,যা তিনি সমাধান করেন নি। তিনি হলেন সর্বশক্তিধর মহাপুরুষ। তাই ভাবছি কালই রওনা দেবো ওনার উদ্দেশ্যে, উনাকে যেমন করে হোক আমাদের এই গ্রামে নিয়ে আসতেই হবে। তবে আমি ভাবছিলাম কেউ যদি আমার সাথে যেত, কারন অতটা পথ। আমি বলেছিলাম দুচার জনকে, কিন্তু কেউ ই সাহস পাচ্ছে না আমার সাথে যেতে,কারন আসতে সন্ধ্যা হয়ে যেতে পারে। তাই বলছিলাম আপনি তো মশাই শুনেছি বেশ সাহসী প্রকৃতির , চলুন না কাল আমার সাথে? গ্ৰামের বিপদ মানেতো , আপনার, আমার সকলের বিপদ তাই না?
ছোট কাকা থতমত খেয়ে বললেন - আ.আ আমি যাব !
মোড়ল মশাই- না বলবেন না, অনেক আশা নিয়ে আপনাকে বলেছি?
ছোট কাকা- ঠিক আছে অত করে বলছেন যখন, তা না হয় ! তবে বাড়িতে গিয়ে আগে কথাটা পরিবারের লোকেদের বলি, তারপর আপনাকে যানাচ্ছি না হয়, কাল সকালে। তাহলে এখন আমি যাই?
মোড়ল মশাই - ঠিক আছে, তবে কাল সকালে দেখা হচ্ছে। এই বলে তিনি ও হনহনিয়ে চলে গেলেন বাড়ির পথে।
চায়ের কাপে শেষ চুমুক টা দিয়ে ছোট কাকা বললেন- এবার তোরা বল আমার কি করা উচিত?
এতক্ষণ যে, দরজার কাছে দাঁড়িয়ে ছোট কাকিমা সব শুনছিলেন, তা কেউ লক্ষ্যই করে নি।
তিনি বেড়িয়ে এসে বললেন- তুমি কাল যাবে, আমিও আমার বাপের বাড়ি র লোকেদের মুখে শুনেছি ওই তান্ত্রিক এর কথা। আমার বিশ্বাস উনি পারবেন। তাছাড়া এই ভাবে ভয়ে মরে,মরে বেঁচে থাকার তো কোন মানে ই হয়না। এই সমস্যার একটা নিশ্চিত সমাধান করতেই হবে।তাই আমি বলছি তুমি যাবে।
অনিমেষ আপ্লুত হয়ে বলল- কাকা চিন্তা নেই, তোমরা দুজন নয়, আমরা দুজন ও যাচ্ছি। কাল মোড়ল মশাই কে বলে দিও যে আমার দুই ভাইপোও সঙ্গে যাবে। শুভজিৎ এর উদ্দেশ্যে অনিমেষ বলল কিরে তুই যাবি তো?
শুভজিৎ বলল - হ্যাঁ অবশ্যই, আমিতো প্রথম থেকেই তৈরি। দেখুন আমি ভুতে বিশ্বাস করি না, তবে ডাক্তারির সাথে যদি এরকম কিছু অলৌকিক অ্যাডভেঞ্চার পাওয়া যায়, তবে সেটা হবে আমার জীবনে এক নতুন অভিজ্ঞতা।
শুভজিৎ এর কথায় সায় দিয়ে, ছোট কাকা বললেন - ঠিক আছে তাই, কাল না হয় আমরা চারজন ই যাব।
সেই কথা মতো পরদিন সকাল সকাল দুটি রিক্সা ভাড়া করে বেড়িয়ে পড়লেন এই চারজন।
গ্ৰামের ঠিকানা তো আগেই জোগাড় করে নিয়ে ছিলেন মোড়ল মশাই, তাই তান্ত্রিক বাবাকে খুঁজে পেতে বেশি সময় লাগেনি।
একটি পরিত্যক্ত দিঘির পাড়ে বিশাল এক গাছের গুঁড়ি র উপর ধ্যাণে বসে আছেন পিশাচ সিদ্ধ এই তান্ত্রিক। তান্ত্রিক বাবাকে দেখে ভক্তির থেকে ভয় বেশি পেলেন সবাই। পরনে রক্তবর্ণ পরিধান, সাথে গলায় মোটা রুদ্ধাক্ষের মালা। মাথার চুল গুলো জঁটা আকারে নেমে গেছে পিছনের পরিত্যক্ত দিঘির দিকে। সবাই এগিয়ে গেলেন তান্ত্রিক এর দিকে। গাছের শুকনো পাতার উপর দিয়ে হেঁটে আসায়, তার শব্দে চোখ খুললেন তান্ত্রিক বাবা। তখনি তিনি রক্ত বর্ণ চোখদুটি পাকিয়ে বললেন - কে তোরা? এখানে কি করছিস?
মোরল মশাই ধীর কন্ঠে বললেন- বাবা আমরা তিলজলা গ্ৰাম থেকে এসেছি, বড় বিপদে পড়ে এসেছি বাবা! এই বলে, এই ক সপ্তাহে গ্ৰামে ঘটে যাওয়া সমস্ত ঘটনা খুলে বললেন।
সব কথা শুনে তান্ত্রিক কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ করে চুপ করে রইলেন। তারপর চোখ খুলে বললেন- তিলজলা গ্ৰাম ,ওটাতো তো পাতালপুর। ওটা একটা অভিশপ্ত গ্ৰাম, ওখানে আবার ও ফিরে এসেছে পাতালের গভীরে থাকা রক্তক্ষাদকেরা।আমি এখানে বসেই অনুভব করছি ওদের অস্তিত্ব।
তান্ত্রিক বাবার কথা শুনে ভয়ে গা শিউরে উঠলো ছোট কাকা ও মোরল মশাই এর। মোরল মশাই হাত জোর করে বললেন- বাবা এই সমস্যার প্রতিকার পেতেই আমরা এসেছি আপনার কাছে। এখন আপনিই সকল আশা ভরসা।
গল্পটির তৃতীয় বা অন্তিম পর্ব পড়তে ওয়েবসাইট টি অবশ্যই হলো করে রাখুন।
Post a Comment
0 Comments