বর্তমানে তামাকের সাথে নোবেল করোনাভাইরাস এর যথেষ্ট সম্পর্ক আছে। অতীতে বলা হতো তামাক সেবন ক্যান্সারের অন্যতম কারণ। আর এখন বিজ্ঞানীরা বলেন তামাক সেবনে করোনা সংক্রমণের হার অনেক বেড়ে গেছে। কারণ ব্যাখ্যা করে বিজ্ঞানীরা জানান-ধূমপান করলে শ্বাসনালী ও ফুসফুসের এসই-২ নামে এক বিশেষ রিসেপ্টরের সংখ্যা বহুগুণ বেড়ে যায়। বিজ্ঞানীরা জেনেছেন যে কোভিদ নয় ভাইরাস আমাদের শরীরের এসই-২ রিসেপ্টর কে সরাসরি আক্রান্ত করে। তাই ধূমপায়ীদের করনা সংক্রমণের হার অনেকটাই বেশি। তাই নিজেকে বাঁচাতে ও পরিবারের সকলকে বাঁচাতে আজ থেকেই ধূমপান ত্যাগ করুন।
Cigarette injurious to health, smoking damage to health




তামাকের সৃষ্টি- যিশু খ্রিস্টের জন্মের প্রায় ছয় হাজার বছর আগে তামাক গাছের বেশ কিছু নমুনা পাওয়া যায়। দাঁতের ব্যথা কমাতে ও কেটে যাওয়ার ওষুধ হিসাবে এই পাতাকে সেই সময় ব্যবহার করতেন আমেরিকানরা। হাজার 855 সালে ভার্সিটি আর ভার্জিনিয়ার টমাস হ্যারিয়েট তামাক পাতা পুড়িয়ে সেটিকে নেশা দ্রব্য হিসেবে প্রথম আত্মপ্রকাশ করান। সেই সময় এই নেশাজাতীয় দব্য মুখ দিয়ে টেনে নাক দিয়ে বের করাটা ছিল পুরুষত্বের প্রতীক। টমাস হ্যারিয়েট অত্যাধিক পরিমাণে এই নেশা করা ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। কিন্তু তাতে ও আটকানো যায়নি ধূমপানের বিস্তার। ১৬০০ খিষ্টাব্দে স্বর্ণমুদ্রার বদলে তামাক পাতা দিয়ে বেচাকেনা শুরু হয়। ১৯০২ সালে সৃষ্টি হয় বিশ্ব বিখ্যাত সিগারেট কোম্পানি মালবোরো। সিগারেট বিড়ি সহ সবরকমের তামাক থেকে যে ভয়ঙ্কর বাড়িতে মানুষ আক্রান্ত হয় তা জানতে পারে বিজ্ঞানী গবেষকেরা। তাই ১৯৮৭ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা 31 এ মেয়ে তামাক বিরোধী দিবস হিসেবে পালন করার সিদ্ধান্ত নেন। তখন থেকেই ধূমপান ও তামাকের বিরূপ প্রতিক্রিয়ার প্রচার শুরু হয়। কিন্তু তাও বিশ্বে প্রায় 100 কোটিরও বেশি মানুষ তামাকে আসক্ত। এক গবেষণায় দেখা গেছে অন্যান্য দেশের তরুণ প্রজন্ম এ বিষয়ে অনেক সচেতন। কিন্তু আমাদের দেশের ছেলেমেয়েরা এখনো সিগারেটে আসক্ত। তাই তোমাকে বর্জন না করতে পারলে করো না ক্যান্সার ও হার্ট এ্যাটাকের কবল থেকে নিজেকে বাঁচানো অতি দুষ্কর হয়ে উঠবে।
Cigarette injurious to health, smoking causes to cancer


তামাকের ধোয়া কি কি ক্ষতি করে- হার্টের অসুখ, নানান ধরনের ক্যান্সার, বুদ্ধিনাশ, অকাল বার্ধক্যের মত নানান ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে এই ধূমপানের কারণে। নিকোটিন ছাড়াও সিগারেটে থাকা নানান ক্ষতিকারক রাসায়নিক প্রভাবে মস্তিষ্কের বাইরের দিকে স্তর কটেক্স এর ক্ষয় শুরু হয়। এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক সমীক্ষা করে এর প্রমাণ পেয়েছেন। প্রায় 600 জন ধূমপায়ীর মস্তিষ্কে এমআরআই করে তারা জানতে পেরেছে যে অধুমপায়ী মানুষের তুলনায় এদের মস্তিষ্কের গ্রে ম্যাটারের পরিমাণ অনেকটাই কমে গেছে। মস্তিষ্কের বাইরের স্তর সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ অংশ। সিগারেটে থাকা ক্ষতিকারক রাসায়নিকের প্রভাবে মস্তিষ্কের গ্ৰে সেল কমে যেতে শুরু করে। গ্রে ম্যাটার হলো মস্তিষ্কের সবথেকে উন্নত অংশ। এই অংশ ই আমাদের বুদ্ধি ভাবনা-চিন্তা কথা বলার শক্তি বোঝা ও সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা বিভিন্ন মানসিক বিকাশের নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র। তাই এই অংশের ক্ষয় হলে মানসিকভাবে বুদ্ধি শক্তি লোপ পেতে শুরু করে।
Cigarette injurious to health, smoking causes of death



 ধূমপানে করোনার প্রভাব কতটা- বেশিরভাগ চিকিৎসকদের মতে ধুমপান করলে পুরুষদের স্পার্ম কাউন্ট কমে যায়। শুক্রাণুর বিকৃত হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি একইসঙ্গে নপুংসকতা হার বাড়তে পারে পুরুষদের মধ্যে। মহিলাদের মা হওয়ার ক্ষমতা হ্রাস পায় এই ধূমপানে। মেয়েদের মেনস্ট্রুয়াল সাইকেল এলোমেলো হয়ে যেতে পারে সঙ্গে মেনোপজ এগিয়ে আসতে পারে। সার্ভিক্স সহ অন্যান্য ক্যান্সারের আশঙ্কা বাড়ে। শ্বাসনালী আর ফুসফুসের সবচেয়ে বেশী ক্ষতি করে তামাকের ধোঁয়া। শ্বাসনালীর ওপরের আবরণটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সর্দি, হাঁচি, কাশি সঙ্গে শ্বাসনালির সংক্রমণ বারবার হয় এর কারণে। বিড়ি, সিগারেটের ধোঁয়ায় অতিমাত্রায় কার্বন-মনোক্সাইড, হাইড্রোজেন সায়ানাইড, আর্সেনিক ক্যালসিয়াম সহ বিভিন্ন তেজস্ক্রিয় পদার্থ থাকে। এদের মধ্যে বেশির ভাগ রাসায়নিক ক্যানসার উদ্দীপক। তামাকের কারণে ক্যান্সার হবার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি থাকে। নাক, কান গলা, মুখের অভ্যন্তরীণ, স্বরযন্ত্র ও ফুসফুসে। অতিরিক্ত তামাক সেবনে ঘ্রাণশক্তি নষ্ট হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। রক্তচাপ ও হার্ট রেট বেড়ে যায় তামাক সেবনে। রক্তে অক্সিজেনের পরিমাণ কমে যায়, একই সঙ্গে রক্ত অতিরিক্ত চটচটে হয়ে যাওয়ায় জমাট বাঁধার প্রবণতা বাড়ে। শরীরের তাপমাত্রা কমতে শুরু করে হার্ট অ্যাটাক ও মস্তিষ্কে সমস্যা সৃষ্টি হয়। ধূমপানে নিউমোনিয়া হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। ত্বকে বয়সের ছাপ পড়ে নির্ধারিত সময়ের অনেক আগেই। চোখের সমস্যা হয় অন্ধত্বের আশংঙ্কা বেড়ে যায়। মারিও দাঁতের সমস্যা বেড়ে যায়।
Cigarette injurious to health, smoking causes to cancer


 এই সকল সমস্যার ঝুঁকি না বাড়াতে নিজের পরিবারকে বাঁচাতে তামাক কে সারা জীবনের মতো ত্যাগ করুন।


আপনার মতামত কমেন্টে জানান